প্রেমিকার জন্য মরা গোলাপ নিয়ে অপেক্ষা করছি।
অনেক দিন পর সেঁজুতির সাথে দেখা হবে। দীর্ঘ দুইমাস। মাঝের সময়টা ফোনে কথা হতো, স্কাইপেতে দেখা হতো, ওয়াটসআপে চ্যাট হতো – আমাদের যোগাযোগ ছিল, কিন্তু তাকে স্পর্শ করা হতো না, ছুঁয়ে দেখা হতো না। স্কাইপে স্ক্রিনের এপাশ ওপাশ ফ্রি লাইন্সিং করতে আসা বাইরের ক্লাইন্টদের দেখতে পারা আর প্রেমিকাকে দেখতে পারা এক নয়। এই দেখা, দেখা নয়। বরং আরও আকাঙ্ক্ষা, আরও হতাশা , তাকে কাছে না পাবার।
গতকাল সে ঢাকা এসেছে। আজ আমাদের আবারো দেখা হবে। দীর্ঘ দুইমাস। এতোটা দিন ভালোবাসার মানুষটিকে দেখতে না পারার কি অসহনীয় অসহ্য যন্ত্রণা তা কেবল যে ভালোবাসে সেই জানে।
আমি সেঁজুতিকে সারপ্রাইজ দিতে চাচ্ছিলাম। এমন কিছু করতে চাচ্ছি যেন সে চমকে যায়, মজা পায়। ব্যাতিক্রম কিছু।
তাই মাথায় মরা গোলাপ উপহার দেয়ার প্ল্যান আসে। সবাই ফুটন্ত গোলাপ দেয় আমি দিবো মরা গোলাপ। পৃথিবীর যে কোন মরে যাওয়া ফুল সেঁজুতির মায়ার কাছে জীবন্ত হয়ে উঠবে। এই থিমে মরা গোলাপ নিয়ে আসা।
(২)
ঐ তো সে আসচ্ছে।আমি এক গুচ্ছ মরা গোলাপ ধরে পিছনে হাত রেখে দাড়িয়ে।
দূর থেকে আমাকে দেখে সে হাসছে। তার পরনে সাদা জমিনে মিষ্টি গোলাপি ফুল তোলা কামিজ, লাল পায়জামা, সাদা ওড়না। ঠোঁটে টকটকে লাল লিপস্টিক। চুল খোলা। এক পাশে সাজানো।
সে এগিয়ে আসচ্ছে। আমার পাল্পিটিশন বেড়ে যাচ্ছে। বুক ধড়ফড় করছে। পায়ে শক্তি পাচ্ছি না, মনে হচ্ছে পড়ে যাবো। পড়ে গেলে সেঁজুতি আমায় তুলতে পারবে? ইদানীং একটু ভারী হয়ে গেছি যে!!
সেঁজুতি আমার কাছে আসলো। তার গায়ের চেনা ঘ্রাণ আমি পাচ্ছি। আমার গলায় দলা পাকিয়ে উঠলো কিছু, চোখ জ্বালা শুরু করেছে, নিঃশ্বাস ভারী, আমার গাল ভিজে যাচ্ছে, মুখে নোনতা পানির স্বাদ। আমি কাঁদছি !! হায় আল্লাহ্! আমি কাঁদছি !!
সেঁজুতি বিস্ফোরিত চোখে আমায় দেখছে। প্রেমিকার সামনে ছেলেদের চোখে পানি অস্বাভাবিক। প্রচন্ড ভালোবাসায়, দেখতে না পাওয়ার অভিমানে প্রেমিকার সামনে কোন প্রেমিক অঝোরে কাঁদছে — এমন দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য সচারাচর হয় না।
কাঁদতে কাঁদতে আমি বললাম — আই লাভ ইউ।
সেঁজুতি আমায় জড়িয়ে ধরেছে। তার কান্নার আওয়াজ পাচ্ছি।
আমার হাতে এখনো ধরা একগুচ্ছ গোলাপ। গোলাপগুলো কি এখনো মরা?
আরও গল্প পড়তে স্টোরি সেকশনে চলে আসুন