লিবিয়ায় নিহত বাংলাদেশী শ্রমিক ও সামান্য আবেদন

লিবিয়ায় ছাব্বিশজন প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিক-কে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে ,নিহতদের সকলেই শ্রমিক।

দেশে ওরা কাজ পাচ্ছিল না, করোনার কারনে পরিস্থিতি আরও নাজুক। বাধ্য হয়েই তারা প্রায় আটত্রিশ জন শ্রমিকদল প্রচন্ড ঝুঁকি নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর লক্ষ্যে লিবিয়ায় আসে।

১৫ দিন আগে বেনগাজি থেকে দুর্গম মরুভূমি পাড়ি দিয়ে ত্রিপলিতে নিয়ে আসার পথে মিজদাহ শহরে তাদের জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবী করা হয়। জিম্মিকারীদের অমানবিক নির্যাতনের এক পর্যায়ে জিম্মিদল তাদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ছাব্বিশজনকে হত্যা করে আর বাকিরা হাতে-পায়ে, বুকে-পিঠে গুলিবিদ্ধ।

গণমাধ্যমে নিহত প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিক-দের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন,

গোপালগঞ্জের সুজন ও কামরুল, মাদারীপুরের জাকির হোসেন, সৈয়দুল, জুয়েল ও ফিরুজ, রাজৈরের বিদ্যানন্দীর জুয়েল ও মানিক, টেকেরহাটের আসাদুল, আয়নাল মোল্লা ও মনির, ইশবপুরের সজীব ও শাহীন, দুধখালীর শামীম, ঢাকার আরফান, টাঙ্গাইলের মহেশপুরের লাল চান্দ; কিশোরগঞ্জের ভৈরবের রাজন, শাকিল, সাকিব ও সোহাগ, রসুলপুরের আকাশ ও মো. আলী, হোসেনপুরের রহিম এবং যশোরের রাকিবুল।

প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিকদের ভিতর যারা আহত তারা এখনও লিবিয়ার হাসপাতালে।

নিহতের লাশ দেশের পরিবারগুলো দেখতে পারবে নাকি জানা নেই, জানা নেই আহত শ্রমিকেরা আদৌ দেশে ফিরতে পারবে কিনা, ফিরলেও খাবে কি? কাজ কই?

(দেশ যদিও সিংগাপুর কানাডা) তবুও জানা নেই একটু খেয়ে পড়ে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য ভয়াবহ ঝুঁকি নিয়েও আর কতোদিন কতো প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিককে বাধ্য হয়ে এভাবে দেশ ছেড়ে অনিশ্চিত প্রবাসে পথে যাত্রা করতে হবে!

জানা নেই, দেশের শীর্ষ এক ধনী পরিবারের দুই সন্তান ব্যাংকের এমডিকে দিনে দুপুরে গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়ার পরও এতদিন কেন মামলা হল না, লকডাউনের মুহুর্তে যখন সব বন্ধ তারপরও কিভাবে তারা স্পেশাল বিমানে চড়ে দেশ ছেড়ে পালাল

জানা নেই, আজ অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে সাধারণ রোগেরও সঠিক চিকিৎসা মিলবে কিনা

জানা নেই, জীবন ও জীবিকা উভয়ের সমান নিশ্চয়তা প্রদানে কীরূপ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে

অনেক কিছুই জানা নেই তবে জানা আছে, প্রশ্ন করা যাবে না।

প্রশ্ন নয়, সামান্য আবেদন।

আবেদন নিয়েও শংকা যেহেতু এই দেশে অপূর্বর ডিভোর্স, মিথিলা সৃজিতের সংসার নিয়ে কথা বলার হাজারো লোক আছে, প্রবাসী শ্রমিকের লাশ দেশে ফেরত আনা নিয়ে কথা বলার মতো মানুষ নেই।

তবুও করজোড়ে আবেদন, প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিক-দের লাশ বিদেশে পড়ে আছে।

শ্রমিকের লাশগুলো অন্তত পরিবারের কাছে ফেরত নিয়ে আসুন।

আহতদের চিকিৎসা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।

অসহায় গরীব শ্রমিকদের পক্ষ হয়ে বিনীত সূরে এইটুকুই চাওয়া

————

রাফিউজ্জামান সিফাতের বইসমূহ

Leave a Reply

Your email address will not be published.