গল্পঃ তুই

গল্প তুই রাফিউজ্জামান সিফাত

বিয়েটা আমার মন মতো হইনি।স্বামী হিসেবে যাকে স্বীকার করে নিতে হয়েছিল তাকে আমার মোটেও পছন্দ হয়নি। কালো খাটো। বাড়তি কোয়ালিটি হিসেবে সে ছিল তোতলা। আমার বড় ভাইয়ের মুখে শোনা, কাজী সাহেবের কাছে কবুল বলতে গিয়েও নাকি সে আঁটকে গিয়েছিল।বহুকষ্টে একবার কবুল বলতে পারার পর কাজী সাহেব নাকি তাড়াতাড়ি আলহামদুলিল্লাহ্‌ বলে রেজিস্টার খাতা এগিয়ে দিয়ে বলেছিল-“বাবাজি সই করে ফেলেন”
হয়তো কাজী সাহেবের সন্দেহ ছিল দ্বিতীয় বার কবুল বলতে পারার সামর্থ্য আমার স্বামীর আর হয়ে উঠবে না।

ভাইয়া খুব রাগারাগি করছিল। স্টেজ থেকে উঠে রাগে গজগজ করতে করতে সে চিৎকার করছিল –আব্বার ঘাউরামির জন্য এক কাউয়া বাইট্টা তোতলার সাথে আমাদের আদরের পরীর মতো বোনটারে জলে ভাসাইয়া দিতে হইল। স্ট্যাম্প পেপার নিয়া আয়, আমি লিক্ষা দিতাছি মৌরির লাইফ ইজ গোয়িং টু বি হেল।

বয়সের ভারে নত আমার আব্বা দূর থেকে হাত জোড় করে ইশারায় অনুরোধ করেছিল ভাইয়াকে থামতে। ভাইয়া স্ট্যাম্প পেপারে না লিখে দিলেও বিয়ের খাওয়া না খেয়ে তার প্রতিবাদ জানিয়েছিল।

সেই কালা বাইট্টা তোতলার সাথেই আনন্দ কমিউনিটি সেন্টারের গেট থেকে ২৩ আগস্ট রাত ১১ টায় আমাকে গাড়িতে তুলে দেয়া হয়েছিল। আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে , আমি যখন আব্বার বুকে মাথা রেখে কাঁদছিলাম আর মনের একদম গভীরে – ” আমার সাথে কেন এমন করলেন ” বলে অভিযোগ করছিলাম আব্বা আমার চুলে হাত বুলিয়ে আমার একদম কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে করে বলেছিলেন – কাঁদিস নারে মা, দেখে নিস তোরা ঠিক সুখী হবি।

(২)

বাইরে ফুল দিয়ে ঘেরা গাড়ির ভিতরাটা ছিল ঘুমোট নিস্তব্ধ। রাতের অন্ধকার কেটে কেটে বিয়ের গাড়ি সামনে এগোচ্ছিল, সামনে ড্রাইভার সর্বোচ্চ সতর্কতায় গাড়ি চালাচ্ছিল। পিছনের সিটে আমি আর স্বামী নামের ভদ্রলোক। আমি জানালায় মাথা ঠেকিয়ে বাইরে তাকিয়ে খুব কাঁদছিলাম। পাশের স্বামী নামের মানুষটি ভাবছিল আত্মীয় স্বজন ছেড়ে চলে আসাতে আমার খারাপ লাগছে। আসলে আমার খারাপ লাগছিল তার পাশে বসে থাকতে। আমি তাকে মন থেকে গ্রহণ করতে পারছিলাম না। আচমকা মানুষটি আমার হাত ধরে খুব আস্তে করে বলেছিল – কে কে কে কেঁ দো না মৌ…উ …রি, দে দে দে …খো আ…ম… ম…রা ঠিক সু সু সুসু…… খী হ…ব

আমি চমকে উঠেছিলাম। ভেঙ্গে ভেঙ্গে আসা অক্ষরগুলো জোড়া লাগালে যেই কথাটি দাড়ায় ঠিক একই কথা আমি কিছুক্ষণ আগে আব্বার বুকে মাথা রেখে শুনেছিলাম। একই কথা এই লোক কিভাবে বললো!

(৩)

আজ আঠারো বছর পর সেইদিনের সেই কালো খাটো তোতলা মানুষটির হাতে হাত রেখে বলতে পারি – ‘আমি সুখী’


আরও গল্প পড়তে স্টোরি সেকশনে চলে আসুন