চোখের সামনে কখনো কাউকে পড়ে যেতে দিও না

সমরেশ স্যার জিলা স্কুল

সমরেশ স্যার। কিছুক্ষন আগে স্যারের মৃত্যু সংবাদ পেলাম। স্যার আমার স্কুল শিক্ষক। ময়মনসিংহ জিলা স্কুল।


মাস কয়েক আগে স্যার যখন অসুস্থ হয়ে শ্যামলী CKD হসপিটালে ভর্তি ছিলেন, স্যারকে দেখতে গিয়েছিলাম। বহুবছর পর দেখা হল।

মাঝে বহু ব্যাচের শত শত ছাত্র স্কুলের চৌকাঠ পেরিয়ে গেছে, স্যার তবুও তার পিছনের বেঞ্চে বসা ক্লাশ জুড়ে শাস্তি পাওয়া ছাত্রটিকে চিনতে পেরেছিলেন।


স্যারের পাশে বহুক্ষণ বসে ছিলাম। বাইরে কোলাহল ঢাকার কর্কশ আওয়াজ, দূষিত ধোঁয়া, অস্থির নগরী। আর ভিতরে স্যারের পাশে বসে আমি অনুভব করছিলাম ব্রহ্মপুত্রের পাড়ের লাল দালানে ঘেরা জিলা স্কুলের সবুজাভ শ্যাওলামাখা শান্ত পুকুরের টলমল নিস্তব্ধতা।

শ্যামলী হাসপাতালে স্যারের ভাড়া নেয়া ছোট্ট কেবিন সেইদিন সন্ধ্যায় ভর করেছিল আমার শৈশব।

আমাদের সমগ্র মানবজীবন কেবলই শৈশব স্মৃতির যোগফল যেন।

একটু একটু স্মৃতি রোমন্থন। দুষ্টামি, শাস্তি, ভয়, স্বার্থহীন আদর, প্রগাঢ় মমতা।


স্যারের সাথে কথা হচ্ছিল। আমরা ওই ব্যাচের কে কি করছি, উনার চিকিৎসা, খরচ,সুস্থ হতে স্যারের আর কতদিন লাগতে পারে। কথার মাঝে স্যার হঠাৎ আমাকে বললেন, বুঝলে হঠাৎ পড়ে গেলাম। এরপর থেকেই আর শরীরটা দাঁড়াল না।


আমার দিকেই চেয়ে চেয়ে নিচু তিনি কথাগুলো বলছিলেন কিন্তু আমি নিশ্চিত তিনি আমাকে দেখছিলেন না। স্যার আপনমনে বললেন, চোখের সামনে কখনো কাউকে পড়ে যেতে দিও না।


স্কুল শেষের পর ভাবতাম, আমাদের স্কুলের স্যাররা কত্ত কম জানে! তখন বয়স কম ছিল। সদ্য ফোটা চোখে নয়া জিনিস দেখে নিজের উপর আত্মবিশ্বাসের মাত্রাটাও ছিল ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর। হয়তো তাই এমন উদ্ভট ভাবনা মাথায় এসেছিল। অথচ আমি কতো মস্ত ভুল ছিলাম, তার প্রমান আবারও পেলাম স্যারের কাছে বসে।


মৃত্যুর আগে শেষ দেখায় সমরেশ স্যার হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়ে আমাকে জীবনের বড় একটা উপদেশ দিয়ে গিয়েছিলেন সেদিন।

চোখের সামনে কখনো কাউকে পড়ে যেতে দিও না

সৃষ্টি কর্তা নিশ্চয়ই সমরেশ স্যারকে উত্তম প্রতিদান দিবেন।


শৈশবের সকল স্কুল শিক্ষকের প্রতি রইল সম্মান।


রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা


রাফিউজ্জামান সিফাতের বইসমূহ