একজন টেলিভিশন রিপোর্টারের দেখা পাওয়ার আশায় মাস্ক ছাড়া মার্কেটে মার্কেটে ঘুরছে উত্তরার জুলফিকার।
সে খবর পেয়েছে টেলিভিশন রিপোর্টারদের কাছে আজকাল মাস্ক ছাড়া পাবলিকদের ব্যাপক ডিমান্ড। দেখলেই নাকি ধরেবেঁধে ইন্টারভিউ নিয়ে নিচ্ছে। আর কথা বলার সময় বেফাঁস উক্তি দিতে পারলে তো কথাই নেই। ভাইরাল! ভাইরাল সংবাদ থেকে ভিডিও ক্লিপ কেটে শেয়ারের উপরে শেয়ার।
ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে পারলে কি বললে মার্কেট কাঁপানো যাবে সেসবের ট্রেনিং গত কয়েকদিন ধরেই জুলফিকার গ্রহণ করছে, কিন্তু টিভি ক্যামেরারই দেখা মিলছে না।
ফিলস লাইক ফোরটি ডিগ্রি গরমে পকেটে মাস্ক লুকিয়ে মুখে মাস্ক ছাড়া ঘুরতে ঘুরতে উত্তরার জুলফিকার যখন হতাশ তখন দেখা মিলল এক টেলিভিশন রিপোর্টারের।
মারমার কাট কাট নিউজ মিলছিল না বলে “চ্যালেঞ্জিং টিভি” রিপোর্টার নিজেও বেশ খানিকটা হতাশ ছিল। নখের ময়লা খেতে খেতে ভাবছিল কোন পথচারীকে ধরে অর্থের বিনিময়ে হলেও তার মুখে মাস্ক খুলে ফেলে তাকে মাস্ক ছাড়া ঘোরাফেরা করছে দেখিয়ে একটা রিপোর্ট বানিয়ে ফেলবে কিনা!
আমেরিকার নাগরিকত্ব ছাড়ছে বিল গেটস কিন্তু কেন?
বস অনবরত চাপ দিচ্ছে, প্রায় সকল টেলিভিশন চ্যানেল মাস্ক ছাড়া পাবলিকের মুখে অস্বস্তিকর অবস্থায় ক্যামেরা ফিট করে অপমানকর ইন্টার্ভিউ নিয়ে অনলাইন মাতিয়ে ফেলেছে কিন্তু চ্যালেঞ্জিং টিভি এখন অব্দি এমন কিছু প্রচার করতে পারল না।
জুলফিকার দেখলে রিপোর্টারকে, রিপোর্টার দেখল জুলফিকারকে। সে এক আবেগঘন মুহুর্ত যেন ফুলে ফুলে টোকা লাগল বলে।
রিপোর্টার – আপনার মুখে মাস্ক কোথায়?
জুলফিকার – আমার মাস্ক আমার বউ পিন্দা তার বাপের বাড়ি গেছেগা। আমার শালার বিয়া। বিয়া খাইতে গেছে।
রিপোর্টার – ( উৎসাহ পেয়ে ) করোনার মধ্যে বিয়ে? ভয় হয় না?
জুলফিকার – ভয়ের কি? তিনবেলা শুকনা মরিচ দিয়া ভাত খাই। মরিচ খাইলে করুনা হয় না। উলটা যারা মাস্ক পরে হেগর করুনা হয়।
রিপোর্টার – (দম বন্ধও হবার জোগাড়) মাস্ক পড়লে করোনা হয়?
( রিপোর্টার ইশারায় ক্যামেরাম্যান সিদ্দিককে জুলফিকার সাহেবের মুখে জুম করতে বলে)
জুলফিকার – তাইলে আর কি! মাস্কের মধ্যে করুণা আছে। মাস্ক পড়লে করুণা মুখের মধ্যে আটকাই যায় আর বাইর হইতে পারে না, তখন নাকের মধ্যে ঢুকে পেটে হান্দায়।
রিপোর্টার উত্তেজনায় রীতিমত কাঁপছে। মারাত্মক বাইট পেয়েছে। টেলিভিশন সংবাদে এইটা দেখালে পাবলিক সেই খাবে আর অনলাইন আগামী আটচল্লিশ ঘণ্টা “চ্যালেঞ্জিং টিভি”র হাতের মুঠোয়।
হয়ত একটা নিউজ দিয়েই রিপোর্টার ফেমাস হয়ে যাবে। প্রমোশন না পেলেও বসকে ধরে কয়ে ইনক্রিমেন্ট বাড়াবেই।
মুক্তা পানি’র সাথে আমরা কিভাবে বন্ধু হতে পারি
রিপোর্টার জুলফিকারের সাথে কোলাকোলি করে ( মাস্ক ছাড়া ) দৌড়ে গাড়ির দিকে ছুটল।
যেভাবেই হোক রাত আটটার খবর ধরতেই হবে।
রিপোর্টার চলে যাওয়ার সাথে সাথে সে বউকে ফোন দিল জুলফিকার – বউ গো পাইছি!
বউ – যা যা শিখাইয়া দিসিলাম ঠিকঠাক কইতে পারছ তো?
জুলফিকার – একশতে একশ। ফড়ফড় কইরা কইছি।
বউ – মরিচের কথা?
জুলফিকার – কইছি
বউ – মাস্ক পড়লে করুণা নাক দিয়া ঢুকে অইডা কইছ না?
জুলফিকার – কইছি কইছি। অইডাই শুইনাই তো ক্যামেরা আমার মুখের উপর ধরল!
বউ – আমারে গাইল দিসিলা না?
জুলফিকার – ( জিবহায় কামড় বসাল ) এহেহ! এইডা মনে আচিল না
বউ – তোমারে পই পই করে শিখাইয়া দিলাম আমারে গাইল দিবা, ক্যামেরার সামনে বউরে গাইল দিলে পাবলিক খায় বেশি! কমপক্ষে এক সপ্তাহ তোমারে নয়া ভিডিও বাইর হইত
জুলফিকার – ( করুন চোক্ষে তাকিয়ে ) আবার ডাক দিয়া ইন্টার্ভিউ লইতে কমু? অহনো যায় নাই। গাড়ি মাত্র স্টার্ট দিতাছে
বউ – নাহ থাক। ডাকলে সন্দেহ করব
জুলফিকার – আরে না, ঐডারেও আমার মতই মনে হইল
বউ – হইছে, তুমি বারিত আও। আর মারকস পইড়া থাক। কাম সেস। মারকস আর খুলবা না,খবরদার।
জুলফিকারের মুখে বিজয়ীর হাসি। মোবাইল এক পকেটে ঢুকিয়ে আরেক পকেট থেকে মাস্ক বের করে সে মুখে লাগায়। তবে জুলফিকারের চেয়েও মুখে হাসি জুলফিকারের বউ শেফালির।
পাশের বাড়ির কুমকুমের জামাই হেলাল ভাই মাস্ক ছাড়া টেলিভিশনে ইন্টার্ভিউ দিয়া এলাকায় ফেমাস হইয়া যাওয়ার পর থেকে কুমকুমের দেমাগে এলাকায় টিকে থাকা দায়।
সমিতির ঘরে আগে রাতে মহিলারা মেঝেতে শতরঞ্জি বিছিয়ে একে অপরের চুলে তেল দিয়ে দিত আর জি বাংলায় নাটক দেখত, এখন কুমকুম খাটে বসে আর শেফালিরা সেই মাটিতেই।
জামাইয়ের অহংকারে কুমকুম হারামজাদির মাটিতে পা পড়ে না।
শেফালির সেদিনই থেকেই ঘুম হারাম। তক্কে তক্কে ছিল। এতদিনের চেষ্টায় আজ তার সোউয়ামিকেও টিভিতে দেখা যাবে।
তবে কুমকুমের জামাই অনলাইনে এতোটা ভাইরাল হতে পারে নাই কিন্তু জুলফিকার পারবে।
অনলাইনে পাবলিককে কোন সব জিনিস সহজে খায় আর লাফায় সেটা শেফালি খুঁজে বাইর করছে। সেই মত এতদিন জুলফিকারকে প্রস্তুত করেছে। কষ্ট বিফলে যায়নি।
শেফালি মোটামুটি নিশ্চিত আগামী কয়েকদিন টেলিভিশন আর অনলাইন জুড়ে কেবল জুলফিকারের মুখটাই দেখা যাবে।
মোবাইল রেখে মুখে হাসির রেশ ফুটিয়ে শেফালি আজ আগে ভাগে সমিতির ঘরে পৌঁছাল।
মেঝেতে বিছানো শতরঞ্জিতে এক মগ পানি ঢেলে খাটটা সে সুন্দর মত নিজ হাতে গুছিয়ে রাখল। খাটের পিছনে দেয়ালে হেলান দেয়ার বালিশ সেট করতেও ভুল করল না।
আজ থেকে কয়েকদিন সমিতির খাটটা শেফালির দখলে।
রাফিউজ্জামান সিফাতের বইসমূহ