চলতি অর্থবছরে প্রথম এগারো মাসে প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিকদের আয় ( রেমিটেন্স ) গত অর্থ বছরের বারো মাসের সমান। অর্থাৎ প্রবাসী বাংলাদেশীরা গত বছরের চাইতেও এ বছর দেশে বেশী টাকা পাঠিয়েছে
ফলে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে এই মুহুর্তে বাংলাদেশে রিজার্ভের পরিমাণ ৩৪.২৩ বিলিয়ন ডলার!
করোনা কালীন সময়ে কাজ কর্ম বাদ দিয়ে ঘরের মধ্যে থেকে আমরা প্রাণ বাঁচাতে চেষ্টা করছি প্রবাসীরা তখনও অমানুষিক পরিশ্রমে বিদেশের মাটিতে কাজ করে দেশে টাকা পাঠিয়েছে। হয়তো তারা একবেলা কম খেয়েছে কিন্তু আমাদের তিনবেলা খাবারের খরচ যুগিয়ে গেছে।
পুরো বিশ্বের মতো বাংলাদেশও করোনা কালীন সময়ে স্তব্ধ, কাজ কর্ম বন্ধ, ব্যবসা হারাচ্ছে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান, ছাটাই হচ্ছে লাখ কর্মী কিন্তু প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে এ মহাদুর্যোগেও দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে। কতদিন থাকবে জানি না তবে এইটুকু নিশ্চিত প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের কারণেই এখন অব্দি বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মারাত্মক ছোবল বাংলাদেশ অনুভব করছে না।
অথচ সেই রেমিস্টেন্স যোদ্ধাদের করোনা কালীন সময়-এর শুরু থেকে আমরা জাতিগতভাবে চরমভাবে অপমান করেছি, সামাজিকভাবে তাদের লাঞ্ছিত করেছি, গালাগাল দিয়েছি, কুটুক্তি করেছি, তাদের নিয়ে ট্রল করেছি
প্রবাসের মাটিতে তাদের গুলিবিদ্ধ লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে পারিনি, বিপদের সময়ে প্রবাসীরা দূতাবাসে সাহায্য চেয়েও সাহায্য পাচ্ছে না, দেশে তাদের পরিবারের খোঁজ নেয়নি কেউ।
যতক্ষন পর্যন্ত প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিক বিদেশ থেকে ডলার পাঠায় ততক্ষণ পর্যন্ত তারা খুব ভালো, তারা রেমিটেন্স যোদ্ধা। শাহজালাল বিমান বন্দরে নামলেই তাদের গায়ে গন্ধ, তারা ক্ষেত, অচ্যুত, তামাশার পাত্র
প্রবাসীরা দিয়ে যাচ্ছে, আমরা কাঙালের মতো নিয়ে যাচ্ছি। অকৃতজ্ঞচিত্তে।
বছরের পর বছর হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে প্রবাসী বাংলাদেশীরা দেশে টাকা পাঠিয়েছে, তাদের টাকায় আমরা রিজার্ভের বড়াই করেছি, নিজেদের উন্নয়নশীল দেশ বলে আত্মতৃপ্তিতে ভুগেছি। করোনা কালীন সময়ের কারণে সামনের কয়েকটা মাস নিশ্চিত বিশ্বমন্দা দেখা দিবে। ফলে প্রবাসে চাকুরী হারাতে পারে বহু শ্রমিক।
আগামী দিনগুলোতে ৩৪ বিলিয়ন ডলার থেকে সামান্য অংশ সেই রেমিটেন্স যোদ্ধাদের পিছনে খরচ হবে, তার কোন নিশ্চয়তা নেই।
এতদিন তারা সার্থ্যহীনভাবে সার্ভিস দিয়ে এসেছে, আগামী কয়েকমাস কি তারা রাষ্ট্রীয় সুদৃষ্টি প্রত্যাশা করতে পারে না?
ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় সকল অপমান, লাঞ্চনা, অবজ্ঞা সহ্য করেও প্রবাসী বাংলাদেশীরা টাকা পাঠিয়ে যাচ্ছে। তাদের টাকায় আমরা এখনো ফুটানি করে যাচ্ছি। নির্লজ্জের মতো।
আমাদের জাতিগত হিপোক্রেসি দেখে মা হাতিটাও লজ্জা পেত!
রাফিউজ্জামান সিফাতের বইসমূহ
Raju
Live a city
রাফিউজ্জামান সিফাত
Thanks for your comment