যখন বলেছিলাম তোমার জন্য সব করতে পারি , তুমি নখ কামড়ালে
বলেছিলাম তোমার জন্য সাত নম্বরে ঝুলে প্রতিদিন গাবতলি টু সদরঘাট বিনা হিসাবে যাতায়াত করবো, নয়া পল্টন থেকে ফজলুর কাকার ভুট্টা ভাজা কিনে আনবো, যাত্রাবাড়ির মোড় থেকে এনে দিব একজোড়া নাশপাতি।
তুমি সেই নখটাই কামড়াতে থাকলে। আমার ভাদ্রের গরমে সাত নম্বর চড়া, ভুট্টা আহরণ আর একজোড়া নাশপাতি অপেক্ষা নখ কামড়ানটাই তখন তোমার মুখ্য ছিল ।
যখন বলেছিলাম সিনেমা দেখতে যাবে? তুমি এদিক ওদিক তাকিয়ে কি যেন খুঁজলে।
বলেছিলাম আনন্দ সিনেমা হলে চলছে মন দেয়া নেয়ার ছবি, ডিসি টিকেট ম্যানেজ করতে পারবো অথবা বলাকা বা সনিতে চলো যাই, এ সপ্তাহে সেখানে লাগিয়েছে মান্নার মারদাঙ্গা ফাইটিং বই।
দেখবে?
উত্তরে সদ্য কেনা আলতার শিশি খুলে তুমি স্বযতনে বাম পায়ের আঙুল রাঙ্গাতে বসলে।
বিউটি আলতার লাল শিশি আমার স্বপ্ন বিভোর মন দেয়া নেয়া বা ফাইটিং দৃশের চেয়েও মধুর ছিল।
বলেছিলাম চলো মহাখালী ফ্লাইওভার থেকে ঘুরে আসি, তুমি ওড়না চেপে হাচ্চি দিলে।
বলেছিলাম রাতে ফ্লাইওভারের পোকায় খাওয়া নিয়ন আলোয় বসে থাকতে ফুর্তি আছে। ধর মাঝে মাঝে রেলিং-এ উপুড় হয়ে ঠেশ দিয়ে নীচে তাকিয়ে থুতু ফেলবে, নীচ থেকে কেউ উপরে তাকালে টুপ করে লুকিয় ফেলবে মাথা শুদ্ধ শরীর। উত্তেজিত গলা ভেসে আসবে। শুনতে আমাদের বয়েই গেল! ততক্ষণে আমরা চলে আসব খিলগাঁও ফ্লাইওভার।
যাবে? রেলিং-এ ঠেশ দিয়ে থুতু ফেলতে?
নাক ওড়নার কোণায় সুড়সুড়ি দিয়ে তুমি আবারও হাচ্চি দিলে।
ফ্লাইওভারের পোকা, উপর থেকে থুতু নিক্ষেপের কিশোর এডভেঞ্চার তোমায় ছুঁতে পারেনি। তুলনায় হাচ্চি দেয়াটা তোমার কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
যখন বললাম, দূর ছাই। আর পারি না। কিছু তো বলো…
চারুকলার সামনের টুপড়ি থেকে কেনা দুগোছা চুড়ি হাতে বাজিয়ে তুমি উঠে দাড়িয়ে বললে – পায়ে ঝিঁঝিঁ ধরেছে, হাতটা ধরো তো…
ছেঁড়ে দিও না কিন্তু!
রাফিউজ্জামান সিফাতের বইসমূহ