কিশোর থেকে কৃষকঃ পৃথিবীর সকল প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর এক

কৃষি বিল ২০২০

আজ তেরো দিন ধরে ভারতে এক ঐতিহাসিক আন্দোলনে সূচনা হয়েছে। প্রায় ত্রিশ লক্ষ ভারতীয় কৃষক ক্ষেত ফসল ছেড়ে ট্র্যাক্টরে করে পরিবার সহ দিল্লী অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছে। ভারতের রাজধানী অভিমুখে কৃষকের এই যাত্রার নাম ওরা দিয়েছে – দিল্লী চলো

ওরা দিল্লী আসচ্ছে কারণ ভারতের সরকার কৃষকের জন্য একটা বিল পাস করেছে। বিলে কৃষকের উৎপন্ন খাদ্য সংগ্রহ ও বিক্রির ক্ষমতা ছেড়ে দেয়া হয়েছে প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর হাতে যা আগে সরকারের (APMC) হাতে ছিল।

ভারতের কৃষকরা মনে করছে এর ফলে কৃষকদের উৎপাদিত খাদ্য পণ্যে প্রাইভেট কোম্পানির দৌরাত্ম্য বাড়বে, ভরা মৌসুমে সরকার নির্ধারিত নূন্যতম ফসলের দাম (MSP) থেকে কৃষক বঞ্চিত হবে এবং কোম্পানির অধিক মুনাফার কারণে কৃষক ফসলের ন্যায্য মূল্য পাবে না।.ফলে স্বাভাবিক কারণেই ভারতের কৃষকরা বিলটা মানেনি।

কৃষকদের দাবী বিল প্রত্যাহার করতে হবে । যতদিন এই বিল প্রত্যাহার হবে না ততদিন তারা দিল্লী দখল করে রাখবে।.

ওরা মুখে মুখে হুমকি দেয়নি। সত্যি সত্যি তারা আগামী ছয়মাসের খাবার দাবার,খেতা বালিশ, কম্বল ট্র্যাক্টরে বেধে দিল্লী চলে এসেছে। ভারত সরকার কৃষকদের স্রোত দিল্লী ঢুকতে দিচ্ছে না। কিন্তু এতে কৃষকদের চুলটাও তারা কেউ ছিঁড়তে পারেনি। ত্রিশ লক্ষ কৃষক দিল্লী বর্ডারের রাস্তায় তোষক মশারি খাটিয়ে শুয়ে পরেছে।

এক পাশে তোষক চাদর মশারি অন্য পাশে জ্বলছে মাটির চুলা। চুলায় রান্না হচ্ছে, লঙ্গরখানা খুলা হয়েছে, গান বাজনা চলছে, ক্ষণে ক্ষণে মিছিল মিটিং হচ্ছে। মিছিল করে গলা শুকালে এসে গ্লাস গ্লাস গরম দুধ খাচ্ছে।

গ্রাম থেকে প্রতিদিন গ্যালন গ্যালন খাটি গরুর দুধ এসে যাচ্ছে।.কৃষকরা বলছে বিল প্রত্যাহার না করে তারা মাঠে ফিরবে না। যতদিন থাকতে হয় থাকবে। রাস্তায় শুয়ে বসে চা বিস্কুট খাচ্ছে আর সরকারকে বলছে — কৃষকের সাথের পাঙ্গা নিও না। ইন্টারনেট থেকে চালের ছবি নামান যায়, ধান ফলানো যায় না। বিল প্রত্যাহার করো। নাইলে যতদিন লাগবে আমরা এখানেই বসে থাকব। কৃষকের খাবাররে অভাব হয় না। আমরা শস্য ফলাতে জানি। শহররের মানুষ তোমরা ভেব দেখ আমাদের ছাড়া তোমরা কি করবে!

লড়াইটা ভাইয়ের জন্য ভাইয়ের, লড়াইটা পরিবারের

পাঞ্জাবের কৃষকরা আন্দোলন শুরু করলেও এখন তা ছড়িয়ে গেছে সমগ্র ভারত জুড়ে। পাঞ্জাব সর্দার কৃষকদের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে ভারতের জনতা। দুদিন আগে কৃষকদের আহবানে ভারত বন্ধ পালিত হয়েছে। রাস্তা ঘাট, অফিস আদালত সব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে। সরকার বাধ্য হয়ে কৃষকদের আলোচনায় বারবার ডেকে নিয়ে যাচ্ছে । লাভ হচ্ছে না। বিল বাতিল না করে কৃষক ঘরে ফিরবে না।

ভারতে কৃষকদের এমন আন্দোলন এর আগে হয়নি। অবিস্মরণীয় এ আন্দোলন আমাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে আমাদের দেশের অতি সম্প্রতি এক আন্দোলনের কথা। কিশোর যুবকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে বছর দুয়েক আগের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনও ঠিক এমনি ঐতিহাসিক ছিল। স্কুল কলেজের লক্ষ লক্ষ কিশোর কিশোরী সেদিন পথে নেমেছিল নিরাপদ সড়কের দাবীতে।

নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ২০১৮
নিরাপদ সড়ক আন্দোলন

মাত্র কয়েক দিনেই কিশোর কিশোরীরা দেখিয়ে দিয়েছিল চাইলেই সড়ক নিরাপদ করা যায়। ওদের আশ্বাস দেয়া হয়েছিল, আশ্বাস দেয়া হয়েছিল একটা নিরাপদ সড়কের। আশ্বাস দেয়া হয়েছিল একটা স্বাভাবিক মৃত্যুর।তারপর?

পরের উত্তর সকলের জানা । পরিবহন সন্ত্রাসীদের হাতে নাগরিকগণ জিম্মি। ওদের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই মুখে পোড়া মবিলের কালি মাখিয়ে দেয়া হয়। পরিবহন অবরোধ ডেকে জনজীবন রুদ্ধ করে ফেলা হয়।

এখানের সেদিনকার কিশোর আন্দোলন ব্যর্থ হলেও ওখানকার আজকের বুজুর্গদের কৃষক আন্দোলন সফল হোক।

পৃথিবীর সকল প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর এক


রাফিউজ্জামান সিফাতের বইসমূহ

Leave a Reply

Your email address will not be published.