করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মৃত দেহ থেকে ভাইরাস ছড়ায় না

করোনা লাশ দাফন

করোনায আক্রান্ত মৃত দেহ-এর শরীর থেকে অন্যের শরীরে ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে এমন নজির এখনও পর্যন্ত বিশ্বের কোথাও পাওয়া যায়নি।

কোভিড ১৯ নিয়ে ভুল তথ্যে আতংক ভয় ছড়াচ্ছে বেশী। আতংকের ফলে মৃত দেহ রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যাওয়া, পরিবারের লাশ গ্রহনে অস্বীকৃতির মতো বহু হৃদয় বিদারক ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটতে দেখা যাচ্ছে। অথচ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে,

এখনো পর্যন্ত এটা প্রমাণিত হয়নি যে, করোনা আক্রান্ত মৃত দেহ থেকে সুস্থ কোন ব্যক্তির মধ্যে করোনাভাইরাস ছড়ায়।

(করোনায় আক্রান্ত মৃত দেহ নিয়ে পড়ুন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন )

ভাইরাসটিকে পেনড্রাইভের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। পেনড্রাইভ বিপুল পরিমাণ তথ্য সংরক্ষণ করে যা কপি, ট্রান্সফার, ভিডিও দেখার কাজে ব্যবহৃত হতে পারে। কিন্তু এইসবের কোনটি কাজে লাগবে না যতক্ষন পর্যন্ত পেনড্রাইভটি একটি ইউএসবি পর্টের সাথে যুক্ত না হয়।

করোনা ভাইরাস ছড়ায় হাঁচি কাশির মাধ্যমে অর্থাৎ ড্রপলেট থেকে। যেহেতু মৃতদেহ জীবিত মানুষের মতো হাঁচি-কাশি দেয় না, সে কারণে মৃতদেহ থেকে জীবাণু বেরিয়ে আসা সম্ভব না। অতএব, এদিক দিয়ে দেখলে মৃতদেহ জীবাণু ছড়ায় না।

এছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মৃত দেহ-তে ৩ ঘণ্টা পর আর ভাইরাসটির কোন কার্যকারিতা থাকে না।

WHO এর বরাদ দিয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে যে,

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মৃত দেহ-তে ৩ ঘণ্টা পর আর ভাইরাসটির কোন কার্যকারিতা থাকে না।

মৃতদেহ দাফন বা সৎকার করতে তিন চার ঘণ্টা সময় লেগেই যায়। তিন ঘণ্টা পরে আর মৃতদেহে এই ভাইরাসের কার্যকারিতা থাকে না।

আর এ কারণেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কেউ মারা গেলে তাকে স্বাস্থ্য নির্দেশনা মেনে নিজ ধর্ম মেনে সৎকার কিংবা পারিবারিক কবরস্থানেই তাকে দাফন করা যাবে।

মৃতদেহ পোড়ালেও দেহাবশেষ বা ছাই থেকে করোনাভাইরাস ছড়ায় না।


আমেরিকার নাগরিকত্ব ছাড়ছে বিল গেটস কিন্তু কেন?


তবে এক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা পালন করা জরুরী। কারন ভাইরাসটি নতুন, প্রতিনিয়তই ভাইরাসটি তার জিনগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে চলেছে, তাই সাবধানতার অংশ হিসেবে দাফন ও সৎকারের সময় এই নির্দেশিকা মেনে চলতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আহ্বান জানিয়েছে।

নির্দেশনাসমূহঃ

  • শুধু কোভিড-১৯ রোগী ব্যবস্থাপনায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তি সুরক্ষা পোশাক (PPE) পরে মৃতদেহ স্পর্শ বা দাফন ও সৎকার করতে হবে।
  • মৃতদেহ স্পর্শ করা যাবে না। চুমু খাওয়া, জড়িয়ে ধরা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • কোভিড-১৯ রোগীর মৃতদেহ ময়নাতদন্ত করা যাবে না।
  • মৃতদেহ দাফনের আগে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তি সুরক্ষা পোশাক পরে এবং জীবাণুমুক্ত করার প্রক্রিয়া মেনে মুখের লালার নমুনা সংগ্রহ করতে হবে।
  • চার সদস্যের একটি দল যথার্থ সুরক্ষা পোশাক পরে মৃতদেহ প্রস্তুত ও বহন করবে।
  • অনিয়ন্ত্রিতভাবে মৃতদেহ পরিষ্কার বা ধোয়া যাবে না। মৃতের গোসল করাতে সাবান পানি ব্যবহার করতে হবে।
  • মৃতদেহ প্লাস্টিকের কভার দিয়ে এমনভাবে মুড়িয়ে রাখতে হবে যেন তা কভারের বাইরের সংস্পর্শে না আসে। প্ল্যাস্টিক না পেলে পলিথিন।
  • দাফনের প্রক্রিয়া যত দ্রুত সম্ভব সম্পন্ন করতে হবে।
  • মৃতদেহ বহনকারী ব্যাগটি কখনো খোলা যাবে না।
  • মৃতদেহ অপসারণের পর রোগীর ঘরটি পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
  • এছাড়া মৃতদেহ পরিবহন, পরিবহনে ব্যবহৃত যানবাহন জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

মৃতদেহ পরিবহনে বিশেষ গাড়ির প্রয়োজন নেই এবং সমাধিক্ষেত্রে পাঠানোর সময় মৃতদেহের ওপর জীবানুনাশক ছিটানোর প্রয়োজন নেই।

রীতি মেনে মৃতদেহ সৎকারের আগে স্বজনরা শেষবারের জন্য প্রিয়জনের দাফনে অংশ গ্রহন করে সম্মান জানাতে পারেন। সতর্কতার সাথে ধর্মীয় সকল রীতিনীতি পালনে বাঁধা নেই।

মৃত দেহ রাস্তায় ফেলে পালানোর মতো অমানবিক হবেন না।

মানবিক হোন, বিশেষজ্ঞদের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা জানুন। আতংক দূর করুন।


রাফিউজ্জামান সিফাতের বইসমূহ

Leave a Reply

Your email address will not be published.