বিল গেটস আমেরিকার নাগরিকত্ব ছেড়ে দিচ্ছে। শেষবারের মতো মাইক্রোসফটের অফিস ঘুরতে গিয়ে সে হু হু করে কেঁদে ফেলল। নিজ হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান ছেড়ে যেতে খারাপ লাগারই কথা।
বিল গেটসেও খারাপ লাগছে। সে কান্না থামাতে পারছে না। চোখের পানিতে সার্জিকাল মাস্ক ভিজে মুখের সাথে লেগে গেছে।
কাঁদলে কি হবে, মনে মনে কিন্তু বিল গেটস খুবই খুশি। আনন্দে তার লাফাতে ইচ্ছে করছে। এতদিন পর সে তার স্বপ্নের চাকুরী খুঁজে পেয়েছে। এতগুলো বছর সে এমন একটা চাকুরীর চেষ্টাই করছিল। মাঝে মাইক্রোসফট গড়েছে, সেরা ধনী হয়েছে কিন্তু তলে তলে সে সবসময় এই ড্রিম জবের সন্ধান করছে।
ড্রিম জব
ভাগ্য ভালো,ফেসবুকে এক বন্ধুর কল্যাণে আগেভাগে চাকুরীর সার্কুলারটি তার নজরে এসেছিল। সঙ্গে সঙ্গে সিভি জমা দিয়ে সে প্রার্থনা বসে যায় , ‘হে ঈশ্বর, আমাকে এই চাকুরীটা দাও। তোমার কাছে আমি আর কিচ্ছু চাই না। আমার জীবন সার্থক হবে যদি এই চাকুরীটা আমি পাই। আমাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিও না প্রভু’
দোয়ার জোরেই কি না কে জানে বিল গেটসের কাছে ফিরতি মেইল আসল – তাকে শর্ট লিস্টেট করা হয়েছে। জুম ভিডিও কলে ইন্টার্ভিউ দিতে হবে।
ইন্টার্ভিউ এর কথা শুনে বিল গেটসের হাত পা কাপাকাপি শুরু হয়ে গেল।
এতো বছরের প্রোগ্রামিং এর অভিজ্ঞতা, টেক লাইনে সে বস, তবুও তার টেনশন হচ্ছিল করছিল; যদি ইন্টার্ভিউ খারাপ হয়, যদি চাকুরী তার মিস হয়ে যায়!
এই চাকুরী না হলে বিল গেটসের জীবন বৃথা। দুনিয়ার প্রতিটা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার, সফটওয়্যার ডেভলোপারদের কাছে এই চাকুরী সোনার হরিণ। আলাদীনের চেরাগ।
জুকারবার্গকে নিয়েই সমস্যা, সেও নাকি সিভি জমা দিয়েছে। কি যে হয় ভাবতে ভাবতে বিল গেটস ইন্টার্ভিউ দিল। শুরুতেই তাকে প্রশ্ন করলো চর্যাপদের রচয়িতা কে?
৭৯ বছরের যুবক জাফরুল্লাহ চৌধুরীর গণস্বাস্থ্য
বিল গেটস জানত এমন প্রশ্নই আসবে, রবীন্দ্রনাথের বিয়ের তারিখ, জীবনানন্দ দাশের পছন্দের তরকারী, নজরুলের দিনে কয়টা শবরী কলা খেত এইসব প্রশ্নের উত্তর সে গত এক মাস রাত জেগে মুখস্ত করেছে।
বিল উত্তর চটপট দিতে পারল, কিন্তু জুকার পারেনি। ও ভেবেছিল তাকে ওওপি, এলগোরিদম, ডাটা স্ট্রাকচার এইসব নিয়ে প্রশ্ন করা হবে! শালা একটা পিউর বলদ। সারাদিন ফেসবুকে থাকলে যা হয় আর কি!
বিল গেটসের চাকুরী হয়ে গেল।
যাত্রা
আজ নতুন চাকুরী উদ্দেশ্যে বিল গেটস আমেরিকা ছাড়ছে। বিলের বউ আকুল নয়নে কাঁদছে, ওগো, ভুলো না আমায়। স্কাইপেতে কল দিও।
বিল গেটস হাসল। টাইম পাইলে দিমুনি। বলেই সে সুটকেস টানতে টানতে সোজা এয়ারপোর্টের বরাবর হাঁটা ধরল।
কিছুক্ষন পর সে খেয়াল করল বিল গেটস হাঁটছে না রীতিমত দৌড়াচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব সে প্লেনে উঠতে চায়। চাকুরীতে জয়েন করতে বিল গেটস-এর আর তর সইছে না। এই চাকুরীর জন্য সে আমেরিকা ছাড়ছে, মাইক্রসফট ছাড়ছে, ঘর সংসার ছেড়েছে। এই চাকুরী তার সবে ধন নীলমনি।
দৌড়াতে দৌড়াতে নিজেকে সে কয়েকবার চিমটি কেটে দেখল! নাহ স্বপ্ন না। সত্যি সত্যি সে দৌড়চ্ছে, চাকুরীটা বিল গেটসের তবে হয়েই গেল!
‘কেনেডি এয়ারপোর্টে পৌঁছে বিল গেটস দেখল শত শত সাংবাদিকরা ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে! সকলেই হতবাক, হতভম্ব। সব ছেড়ে ছুঁড়ে বিল গেটস কোথায় যায়?
বিশ্ব মিডিয়া তোলপাড়। নিউ ইয়র্ক টাইমস, গার্ডিয়েন, ফক্স নিউজের সাংবাদিকরা হুড়মুড়িয়ে বিল গেটসের সামনে মাইক্রোফোন ধরে জিজ্ঞাস করল, – ‘বস, কাহিনী কি, আপনে কই যান?
বিল গেটস দাঁত কেলাতে কেলাতে উত্তর দিল, ‘বাংলাদেশে যাই। ওইখানকার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর-এর ওয়েবসাইট মেইন্টেনেন্সের দায়িত্ব পেয়েছি’!
————
সম্পূরক খবরঃ
শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ড্রাইভার মালেক
চারটি ওয়েবসাইট উন্নয়ন করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর-এর খরচ ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
পাঁচটি ডাটাবেইস তৈরিতে খরচ হয়েছে ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
পাঁচটি কম্পিউটার সফটওয়্যার কেনায় খরচ ধরা হয়েছে ৫৫ কোটি টাকা
রাফিউজ্জামান সিফাতের বইসমূহ